জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্স হবে তিন বছর মেয়াদি (কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চার বছর মেয়াদি স্নাতক (অনার্স) কোর্সকে তিন বছরে সীমিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে এক বছরের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন, যার মাধ্যমে তারা দুটি সার্টিফিকেট অর্জন করবেন—একটি অনার্সের এবং অন্যটি ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট। শিক্ষাজীবন শেষে যাতে তারা দেশ-বিদেশে ভালো চাকরির সুযোগ পান, সে লক্ষ্যে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

নতুন কাঠামোর সুবিধা

  • কম সময়েই স্নাতক ডিগ্রি: তিন বছরের অনার্স কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ থাকবে।

  • কারিগরি দক্ষতা অর্জন: বাধ্যতামূলক এক বছরের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জন করবেন।

  • চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি: ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে, যা চাকরির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে।

প্রস্তাবিত পরিবর্তনের গুরুত্ব

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের চাকরি পেতে আর বেগ পেতে হবে না। তিনি বলেন, “এটি একটি অভিনব ও অসাধারণ সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে।”

কারিগরি শিক্ষার সংস্কার

কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

  • অপর্যাপ্ত শিক্ষকের সমস্যা: বর্তমানে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের মাত্র ১৮% রয়েছে।

  • প্র্যাকটিক্যাল ঘাটতি: পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি, প্রশিক্ষক ও শিক্ষকের অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না।

  • পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি: এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে কারিগরি শিক্ষাকে আরও কার্যকর করা হবে।

আলোচনা সভায় মতামত

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল সিদ্দিক জোবায়ের।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন:

  • গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান (মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক)।

  • কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম।

  • প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।

  • হেড অব অফিস অ্যান্ড ইউনেস্কো রিপ্রেজেনটেটিভ টু বাংলাদেশ সুজান ভাইজ।

এই নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের সময় বাঁচবে, দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকা সহজ হবে। সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে যে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষে এক বছরের কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছরের স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরও বহু শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে তারা দেশের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারছে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন পরিকল্পনা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান চার বছরের স্নাতক (সম্মান) কোর্স তিন বছরে সীমিত করা হবে। শেষের এক বছর বাধ্যতামূলক কারিগরি প্রশিক্ষণের আওতায় থাকবে। এই পরিবর্তনের ফলে:

  • শিক্ষার্থীরা পৃথক দুটি সার্টিফিকেট পাবে (স্নাতক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ)।
  • চাকরির বাজারে তাদের দক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • দেশ-বিদেশে ভালো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘এক বছর কারিগরি কোর্স বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের উপযোগী হয়ে ওঠে।’

আলোচনা সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য

এই পরিকল্পনা নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারকগণ মতামত প্রদান করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও বিএনসিইউর চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন:

  • ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব
  • আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব
  • ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান

সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল সিদ্দিক জোবায়ের

কেন এই পরিবর্তন প্রয়োজন?

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব দক্ষতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে:

  • শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
  • বেকারত্ব কমবে এবং তারা উদ্যোক্তা বা পেশাদার হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।
  • দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল ও প্রতিযোগিতামূলক করতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি শিক্ষার্থীদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানে নয়, বরং হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তন সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।